সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্র সতিপাড়ায় অবস্থিত আলফা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১০এপ্রিল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,
দক্ষিণ রুপকানিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আমিনুল হক (৫০) আলফা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আয়েশা নুরে রুবাইয়াতের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জন আসামী দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।বাদীর মেয়ে খাদিজা সুলতানা (২০) এর সাথে মির্জাখীল গ্রামের নুর আহমদের ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৩০) এর সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের পর আমার মেয়ের স্বামী সৌদি আরব চলে যায়। এরপর হতে আমার মেয়ে শ্বশুর বাড়ীতে অবস্থান করে।এরমধ্যে আমরা জানতে পারি যে, আমার মেয়ে গর্ভবতী। আমার মেয়ে গর্ভবতী
হওয়ার বিষয়টি জানার পর আমি ও আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ীর লোকজন আমার মেয়েকে উল্লেখিত বিবাদীর তত্ত্বাবধানে আলফা হাসপাতালে চিকিৎসা করে আসতেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে আমি ও আমার মেয়ের শশুর বাড়ীর লোকজন আমার মেয়েকে গর্ভবর্তী
অবস্থায় উপরোক্ত বিবাদীর মাধ্যমে চিকিৎসা করানো সহ সকল পরামর্শ গ্রহন করি। আমার মেয়ের গর্ভকালীন চিকিৎসা চলা অবস্থায় উপরোক্ত বিবাদী জানায় যে, গত ৫এপ্রিল তারিখে আমার মেয়েকে উপরোক্ত
বিবাদীর কর্মস্থল আলফা হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করানোর জন্য। পরবর্তীতে গত০৫এপ্রিল তারিখে উপরোক্ত বিবাদীর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা আমার মেয়েকে আলফা হসপিটাল এন্ড
ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়া আসি। ঐদিন দুপুর অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময় উপরোক্ত বিবাদী আমার মেয়েকে পরীক্ষার নিরীক্ষা করিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য বলে। আমরা বিবাদীর কথামতো আমার মেয়েকে হাসপাতালের ২০৭ নাম্বার কেবিনে উপরোক্ত বিবাদীর তত্ত্বাবধানে ভর্তি করাই। আমার মেয়েকে কেবিনে ভর্তি করানোর পর ঐদিন সন্ধ্যা অনুমান ০৭ ঘটিকা পর্যন্ত উপরোক্ত বিবাদী আমার মেয়েকে নরমাল ডেলিভারী
করানোর জন্য অপেক্ষা করেন। ঐসময় আমি ও আমার মেয়ের শ্বশুড় বাড়ীর লোকজন একাধিকবার উপরোক্ত বিবাদীকে আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে উপরোক্ত বিবাদী আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা ভাল আছে মর্মে জানায়। এরই মধ্যে গত ০৫এপ্রিল তারিখে রাত অনুমান ০৮ ঘটিকার পর উপরোক্ত বিবাদীকে হাসপাতালে না দেখিয়া একাধিকবার হাসপাতালে খোঁজা-খুঁজি করি কিন্তু উপরোক্ত বিবাদীকে হাসপাতালে পাওয়া যায় নাই। এতে আমরা নিরুপায় হইয়া হাসপাতালের কর্মরত অজ্ঞাতনামা বিবাদীদের নিকট হইতে উপরোক্ত বিবাদীর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার- ০১৬২৬-৭৪০৯৭৩ ও 018388১৭৪৮৪
সংগ্রহ পূর্বক বিবাদীকে একাধিকবার ফোন করি। আমরা একাধিকবার ফোন করা সত্ত্বেও উপরোক্ত বিবাদী আমাদের
ফোন রিসিভ করে নাই। তখন আমরা হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা অজ্ঞাতনামা বিবাদীদেরকে উপরোক্ত বিবাদীর
বিরুদ্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা উপরোক্ত বিবাদী কোথাও আছে সেটি জানেনা মর্মে জানায়। বিষয়টি আমরা জানার পর আতংকিত হইয়া পড়ি এবং কর্তব্যরত অজ্ঞাতনামা বিবাদী অর্থাৎ নার্সদের কাছে আমার মেয়ের শারীরিক
অবস্থার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা ভাল আছে মর্মে জানায়। আমি ও আমার মেয়ের শ্বশুড় বাড়ীর আত্মীয় স্বজন একাধিকবার আমার মেয়ের সাথে দেখা করার চেষ্টা করিলেও অজ্ঞাতনামা
বিবাদীগণ অর্থাৎ কর্তব্যরত নার্স ও হাসপাতালে কর্মরত লোকজন আমাদেরকে আমার মেয়ের সাথে দেখা করিতে বাধা প্রদান করে । পরবর্তীতে গত ০৬ এপ্রিল তারিখে রাত অনুমান পৌনে ৩টার সময় হটাৎ কর্তব্যরত অজ্ঞাতনামা বিবাদী অর্থাৎ নার্স ও হাসপাতালের লোকজন আমার মেয়েকে ডেলিভারী রুমে নিয়া যাইতে থাকে।
তখন আমরা নার্সদের ডাক্তার আসার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা জানায় যে, আমার মেয়ের বাচ্চা ডেলিভারী করানোর জন্য তাহারা আমার মেয়েকে ডেলিভারী রুমে নিয়া যাইতেছে। তখন আমরা উপরোক্ত বিবাদী আসিয়াছে কিনা জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা কোন সত্ত্বর দেয় নাই। ঐসময় আমরা উপরোক্ত বিবাদীকে একাধিকবার ফোন করিলেও উক্ত বিবাদী আমাদের ফোন রিসিভ করে নাই। একপর্যায়ে গত ০৬এপ্রিল তারিখে ভোর অনুমান ০৪ ঘটিকার সময় অজ্ঞাতনামা বিবাদী অর্থাৎ কর্তব্যরত নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার নিকট আসিয়া জানায় যে, আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ এবং এই মূহুর্তে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া না গেলে আমার মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তখন আমরা বুঝিতে পারি যে, অজ্ঞাতনামা বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজশে ডাক্তার না আসা সত্ত্বেও আমার মেয়েকে ডেলিভারী রুমে নিয়া বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করিয়াছে এবং যাহার ফলে আমার মেয়ের শরীরিক অবস্থার চরম অবনতি হইয়াছে। ঐসময় আমরা আমার মেয়ে ও তাহার অনাগত সন্ধানের কথা চিন্তা করিয়া দ্রুত চট্টগ্রাম শহরস্থ মেডিকেয়ার হাসপাতালে নিয়া যাই। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার
আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা দেখিয়া চিকিৎসা অবহেলার বিষয়টি জানায় এবং প্রথমে আমার মেয়েকে হাসপাতালে
ভর্তি নিতে অনীহা প্রকাশ করে। আমাদের অনুরোধে কর্তব্যরত ডাক্তার আমার মেয়েকে মেডিকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সেখানে সিজারের মাধ্যমে গত ০৬এপ্রিল তারিখে ভোর অনুমান ০৬. ঘটিকার সময় আমার মেয়ের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ঐসময় কর্তব্যরত ডাক্তার আমাদেরকে জানায় যে, আমার মেয়েকে আলফা হাসপাতালে ভর্তি করা অবস্থায় ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে আমার মেয়ের ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করা হয় যাহার ফলে সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তান এবং মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হইতেছে। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার আমার নাতনির চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী সার্জিস্কোপ হাসপাতালে নিয়া ভর্তি করানোর জন্য বলিলে আমরা আমার নাতনিকে উক্ত হাসপাতালে নিয়া লাইফ সাপোর্টে রাখি। সেখানে রাখার পর আমার সদ্য জন্ম নেওয়া নাতনির শারীরিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়া চিকিৎসা করানোর জন্য বলিলে আমরা আমার নাতনিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়া ভর্তি করায় সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আমার নাতনির অবস্থা
গুরুতর দেখিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় যে, আমার নাতনিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। উক্ত হাসপাতাল হইতে
আমার নাতনিকে রিলিজ দেওয়ার পর আমরা আমার নাতনিকে ডেলটা হেলত কেয়ার হাসপাতালে নিয়া ভর্তি
করাই। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ০৯এপ্রিল তারিখে রাত অনুমান সাড়ে ১১টার সময় আমার নাতনি মৃত্যুবরণ করেন। আমি আমার নাতনির বিষয়ে সকল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সহিত আলোচনায় জানতে পারি যে, আলফা হাসপাতালে আমার মেয়ের ভুল চিকিৎসা করানো সহ দায়িত্ব অবহেলা করায় এবং অজ্ঞাতনামা বিবাদী অর্থাৎ নার্সাণ বেআইনীভাবে আমার মেয়ের বাচ্চা ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করার ফলে আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়া সহ আমার নাতনির শারীরিক অবস্থা খারাপ হইয়া যায়। যার ফলসরূপ আমার নাতনি জন্মের ০৪ দিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত মৃত্যুর জন্য উপরোক্ত বিবাদীর দায়িত্ব
অবহেলাসহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীদের ভুল চিকিৎসা একমাত্র দায়ী বলে জানান।
এব্যাপারে আলফা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার আয়েশা নূর রুবাইয়াতের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত কমিটির তদন্তের আলোকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।