ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে হাঁটু পানি, কার্পেটিং ও পাথর উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। কোথাও কোথাও কাদা পানি জমে আছে। সেই ইট পানিতে আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার অন্যতম যোগাযোগপথ কাজিরহাট–গাড়িটানা বাজার সড়কটি। বেহাল এই সড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে দুই উপজেলার অর্ধলক্ষ মানুষ।
কাজিরহাট বাজার এলাকায় বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় অফিসগামী, শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন নিয়মিত।
সড়কটির দু’পাশ রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভূজপুর রাবার ড্যাম, ভূজপুর শিশুপার্ক, আচিয়া ও কৈয়া ছড়া চা বাগান। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে শতশত শিক্ষার্থী, চা শ্রমিক ও অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতায়াত করেন। শুধু স্থানীয় জনগণই নয়, ভূজপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোতে পৌঁছাতে পর্যটক ও ভ্রমণপিয়াসীরাও এই সড়কের উপর নির্ভরশীল। ফলে সড়কটির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সংস্কারের অভাবে এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ব্যবহারকারীদের জন্য যেন এক দুর্ভোগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংস্কারের অভাবে প্রতিদিনই এই সড়কে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে তাদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। দ্রুত সংস্কার না হলে সড়কটি সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৬ কিলোমিটার সংস্কারের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ওসমান বলেন, “রাস্তার অবস্থা এতটাই নাজুক যে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষার মৌসুমে পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনার জন্য আমাকে রাবারড্যাম এলাকায় যাতায়াত করতে হয়, কিন্তু এই অবস্থার কারণে তা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
সড়কটির দুরবস্থার কারণে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, শিক্ষার্থী ও পর্যটকরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। ভূজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছমা আকতার বলেন, “প্রতিদিন কাদা-পানি মাড়িয়ে স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় ইউনিফর্মের পাশাপাশি বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। যদি সড়কটি সংস্কার করা হয়, তবে আমরা আনন্দের সাথে স্কুলে যেতে পারব।”
সিএনজি অটোরিকশা চালক রহিম উদ্দিন বলেন,
“এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানো মানে যেন নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। পথে পথে গর্ত থাকায় প্রায়ই গাড়ি বিকল হয়ে যায়। যাত্রী তুলতে গেলেও অনেকে উঠতে চান না। নিয়মিত মেরামতের খরচ বাড়ায় আয়-রোজগার থেকেও বেশির ভাগ অংশ চলে যাচ্ছে গ্যারেজে।”
কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান জানান, সড়ক দিয়ে ইজিবাইকে কলেজে যাতায়াত করতে ভয় লাগে। কারণ ভাঙাচোরা সড়কে ইজিবাইক এমনভাবে হেলেদুলে চলে, যেন কাত হয়ে পড়ে যাবে। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
ভূজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এএইচএম শাহজাহান চৌধুরী শিপন বলেন, কাজিরহাট জিসি–গাড়িটানা বাজার সড়কটি এ অঞ্চলের প্রাণ। উপজেলা প্রকৌশলীকে সড়কটি সম্পর্কে জানিয়েছি । আশাকরি জনগণের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত সংস্কার করবে।
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) তন্ময় নাথ জানান, সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার, প্রথম ধাপে ৬ কিলোমিটার সংস্কারের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জনগণের কষ্ট আমরা বুঝি। তাই দ্রুত অনুমোদনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আশ্বাস দেন, সংস্কার কাজে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।